আইনের মাধ্যমে গঠিত বলে আইনগত নিয়ম পালনের মধ্য দিয়ে সমিতি গঠন ও পরিচালনা করতে হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালের সমবায় আইনে সমবায় সংগঠন গঠন করতে চাইলে তিনটি পর্যায়ে সমবায় সমিতির গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ৷
ক. উদ্যোগ গ্রহণ পর্যায় :
প্রাথমিক সমবায় সমিতি গঠন করতে চাইলে সমমনা, সমশ্রেণি, সমপেশা ও সমমর্যাদার প্রাপ্ত বয়স্ক ন্যূনতম ২০ জন মানুষ স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। এ সকল উদ্যোক্তা নিজেদের মধ্য থেকে ৬ জনকে নিয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে। উক্ত কমিটি নিবন্ধনসহ সমবায় সমিতি গঠনের জন্য একটি উপবিধি তৈরি করে। উপবিধিতে সমবায় সমিতির নাম, ঠিকানা, উদ্দেশ্য, মূলধনের পূর্ণ বিবরণ, শেয়ারের মূল্যমান ও সংখ্যা, শেয়ার বিক্রয় পদ্ধতি, উদ্যোক্তাদের নাম, ঠিকানা ও পদবি এবং সমিতি পরিচালনার নিয়ম উল্লেখ থাকে। সমিতির জন্য একটি সিলমোহরও তৈরি করতে হয়। সমিতি সসীম দায়বিশিষ্ট হলে নামের শেষে লিঃ কথাটি লিখতে হয়।
খ. নিবন্ধন পর্যায় :
এ পর্যায়ে নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। সমিতিটি যে এলাকায় অবস্থিত সে এলাকায় সরকার কর্তৃক মনোনীত নিবন্ধকের অফিস থেকে নিবন্ধনের আবেদন ফরম-১ সংগ্রহ করে, যথাযথভাবে পূরণ করে নির্ধারিত ফিসহ প্রস্তাবিত উপ আইনের ৩ (তিন) কপিসহ নিবন্ধকের নিকট জমা দিতে হয়। সরকারি কর্মসূচির আওতায় বিত্তহীন, ভূমিহীন এবং আশ্রয়হীনদের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে গঠিত প্রাথমিক সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকার ট্রেজারি চালান, অন্যান্য প্রাথমিক সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য ৩০০ (তিন শত) টাকার ট্রেজারি চালান, কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য ১,০০০ (এক হাজার) টাকার ট্রেজারি চালান এবং জাতীয় সমবায় সমিতির নিবন্ধনের জন্য ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার ট্রেজারি চালান আবেদনপত্রের সহিত জমা দিতে হয়। নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন সমবায় সমিতির শেয়ার মূলধনের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা আছে। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় বা সরকারি কর্মসূচির আওতায় গঠিত প্রাথমিক সমবায় সমিতি নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ৩,০০০ (তিন হাজার) টাকা, ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি ব্যতীত অন্যান্য প্রাথমিক সমিতি নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা, ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকার এবং কেন্দ্রীয় সমিতি ও জাতীয় সমিতি নিবন্ধনের জন্য কমপক্ষে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পরিশোধিত শেয়ার মূলধন থাকতে হবে। আবেদনপত্রটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাগজপত্র ও নিয়মাবলিসহ সকল বিষয় সঠিকভাবে পাওয়া গেলে নিবন্ধক সমবায় সমিতির নাম তার নিবন্ধন বইতে তালিকাভুক্ত করেন এবং সমিতিকে সিলযুক্ত দুইকপি উপবিধি ও নিবন্ধন নম্বর প্রদান করেন। এভাবে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
গ. কার্যারম্ভ পর্যায় :
নিবন্ধনপত্র পাওয়ার পর সমবায় সমিতি আইনগতভাবে অস্তিত্ব লাভ করে। নিবন্ধিত না হলে কোনো সংগঠন সমবায় কথাটি ব্যবহার করতে পারে না। নিবন্ধন প্রাপ্তির পর উক্ত সমিতির উদ্যোক্তাগণ বিভিন্ন প্রকারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করতে পারে।
Read more